মেঘালয় যা সারা পৃথিবীর কাছে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড হিসাবে পরিচিত। রাজ্যের রাজধানী শিলং ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই শহরের বাইরে ও অভ্যন্তরে প্রচুর দর্শনীয়স্থান রয়েছে, যার প্রতিটি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। যেসব প্রকৃতিপ্রেমী তুলনামূলক কম খরচে দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে আগ্রহী তাদের জন্য আদর্শ পছন্দ হতে পারে মেঘালয়। জীবনের একঘেয়েমি ক্লান্তিকর মুহূর্ত গুলোকে আড়াল করতে ঘুরে আসতে পারেন মেঘ, পাহাড়-পর্বত, ঝর্ণা আর জলপ্রপাতের রাজ্য ভারতের স্কটল্যান্ড খ্যাত মেঘালয়ের শিলং ও পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের এলাকা চেরাপুঞ্জি থেকে। বাংলাদেশ সিলেট সীমান্ত থেকে চেরাপুঞ্জি সোজাসুজি কুড়ি কিলোমিটারেরও কম। বাড়ির পাশেই বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা, সেখানে আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। এক সময় এটি ”প্রাচ্যেও স্কটল্যান্ড’’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে শহরটি ধবংস হয়ে যায় এবং এরপর এটিকে পুনরায় গড়ে তোলা হয়।





কীভাবে যাবেন
ঢাকা কিংবা বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে সিলেট, সেখান থেকে বাসে কিংবা সিএনজি স্কুটারে তামাবিল। ভারতের পাহাড়গুলোর ঠিক পাদদেশে বাংলাদেশের এই প্রান্তে সমতলভূমিতে ইমিগ্রেশন-কাস্টম অফিস।


সীমান্ত পার হলেই জায়গাটার নাম ডাউকি। ইমিগ্রেশন-কাস্টমের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভাড়া করতে হবে ট্যাক্সি। শুরুতে শিলং যাওয়াই ভালো। শিলং শহর আর তার আশপাশের জায়গাগুলো ঘুরে বেড়িয়ে তারপর সেখান থেকেই এক দিনের জন্য চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসা যাবে।
আর যারা শুধু চেরাপুঞ্জি যেতে চান, তারা ডাউকি থেকেই ট্যাক্সি ভাড়া করবেন চেরাপুঞ্জিতে। তবে সেখানে থাকার মতো বেশি হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি, ফলে আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে বিপাকে পড়ে শিলং চলে যেতে হতে পারে। শিলং ভালো মানের হোটেলের ভাড়া ১৫০০-২০০০ রুপি/দিন।



প্রয়োজনীয় তথ্য:
মেঘালয়ে আপনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও যেতে পারেন আবার সহায়তা নিতে পারেন নির্ভরযোগ্য কোনো ট্যুর অপারেটরের। দ্বিতীয়টি বেছে নিলে আপনাকে ভিসার আনুষ্ঠানিকতা, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। যদিও এতে খরচটা একটু বেশি পড়বে তবে আপনার ভ্রমণ হবে অনেক নিরাপদ এবং দক্ষ ট্যুরিস্ট গাইডের সঙ্গও পাবেন। তবে তবে আমি মনে করি নিজ ব্যবস্থাপনায় গেলে সবচেয়ে ভালো। কেননা এতে করে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবেন এবং অনেক কিছু শিখতে পারবেন আবার অনেক কিছু উপভোগ করতে পারবেন যেটা হয়তোবা ট্যুর অপারেটর সাথে গেলে পাবেন না। একটু সতর্ক থাকতে হবে। হোটেল ও ড্রাইভার দুটির ক্ষেত্রেই বাঙালি কিংবা নেপালিদের বেছে নেওয়ার এবং খাসিয়াদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। হোটেল রুম এবং ট্যাক্সি রিজার্ভের সময় সুনিপুণভাবে দরদাম করতে ভুলবেন না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতে বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলুন। কারণ রাতের শিলং কিন্তু দিনের মতো নিরাপদ নয়। তামাবিল সীমান্তে যাওয়ার আগেই খেয়াল করে সোনালী ব্যাংকে ভ্রমণ কর পরিশোধ করুন। ডাউকি বাজারে মানি এক্সচেঞ্জ আছে যেগুলো থেকে আপনার যাত্রাপথের খরচের জন্য প্রয়োজনীয় ভারতীয় রুপির ব্যবস্থা করতে পারবেন।


একনজরে আমাদের মেঘালয় (শিলং; চেরাপুঞ্জি) ভ্রমণঃ
১ম দিনঃ
ডাউকি থেকে স্নোংপেডেং, বড়হিল ঝরনা, মাওলিলং ভিলেজ, নোহায়েট লিভিং রুট ব্রিজ, বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট, মাওডক ভ্যালি হয়ে চেরাপুঞ্জি রাত্রি যাপন।


২য় দিনঃ
সেভন সিস্টার ফলস, মাওসমাই কেভ, ইকো পার্ক,  নোহাকালিকাই ফলস, উই স ডং ফলস, ডেন্টলেইন ফলস, মাওস্মাই ফলস হয়ে রাত্রি যাপান চেরাপুঞ্জি।


৩য় দিনঃ লিভিং ননগ্রিট রুট ব্রীজ ট্রেকিং, রেইনবো ফলস হয়ে শিলং রাত্রি যাপন।

৪র্থ দিনঃ
উমায়িম লেক, ডন ভস্কো মিউজিয়াম, এক্সপ্লোর পুলিস বাজার, এ্যালিপেন্ট ফলস, সাইড সিয়িং


৫ম দিন
শিলং পিক, মদিনা মসজিদ, লাইতলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হয়ে স্নোংপেডেং রাত্রি যাপন।


ষষ্ঠ দিনঃ 
ক্রাংসুরি,  পি পি ফলস হয়ে বাংলাদেশ।


প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড একবারে কোন কিছু সম্পন্ন করা সম্ভব নয় তিন মেয়াদে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অনেক অসম্পূর্ণ থেকে গেছে এখনো।

আবহাওয়া
শিলংয়ে সারাবছর মনোরম আবহাওয়া মেলে। তবে মার্চ ও জুন মাস বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ মরসুম। গ্রীেষ্ম হাল্কা উলের পোশাক ও শীতে ভারি গরমজামার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলে যখন-তখনই হতে পারে। তাই, ছাতা আর বর্ষাতির বেন্দাবস্তও রাখা চাই।