হাওরে এক রাত, কিশোরগঞ্জ
By Iqbal Jabed 23th june 2015 

কিশোরগঞ্জের ইতিহাসের একটি আকর্ষণীয় দিক হল হাওর। শীতকালে যে প্রান্তর ফসলে পূর্ণ কিংবা শুকনো মাঠ, বর্ষাকালে সেখানে রুপ নেয় প্রবাল জলধারা। শুধু পানির প্রবাহ নয় প্রচন্ড ঢেউ আর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি সাগরের বিশালত্বের কথাই মনে করিয়ে দেয় । দ্বীপের মত গ্রামগুলি যেন ভেসে থাকে জলের বুকে। হাওরের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত কিশোরগঞ্জ, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম , উত্তরে মিঠামইন, উত্তর-পূর্ব কোণে ইটনা, উত্তর-পশ্চিমে কটিয়াদী, পশ্চিমে নিকলী এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা নিয়ে গঠিত।

এর আগে টাংগুয়ার হাওরে যাওয়া হলেও রাত কাটানো হয়নি। এইবার প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে চলে গেলাম কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য নিকলি হাওরে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিধারা আর বাতাস উপেক্ষা করে ঘাট থেকে বিশাল বজরা ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়লাম হাওরের বুকে। সোয়াইজনী নদীর আকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে স্থানীয় দামপাড়া বাজার, মজলিসপুর বাজারে ঘুরাঘুরি এবং কেনাকাটায় মগ্ন ছিল সবাই। শুকনো মৌসুমে এইসব বাজারে আসা -যাওয়া  সড়ক পথে হলেও বর্ষায় নৌকায় একমাত্র অবলম্বন। বেশ কয়েকটি সুন্দর ব্রীজ রয়েছে এই বাজারগুলোতে যাতায়াতের জন্য। রাতভর আড্ডায় ছিল এই ব্রীজেই।

তারপর আবারো হাওরের পথে। হাওরের উট বজরার গতিতে দূর থেকে দেখা দ্বীপ/গ্রাম গুলো ক্রমশই দূরত্ব কমছে। মনে হল অকূল দরিয়া পার হতে হচ্ছে। কূল নাই কিনার নাই, শুধু অশান্ত ঊর্মিমালা ওঠানামা করছে বিরামহীনভাবে। চারপাশ পরিপূর্ণ জলাভূমি বৃষ্টিভেজা হটাৎ আবহাওয়ায় উগ্র আচরণ বাধ্য করল অজানা কোন তীরে ফিরতে। বাতাসের গতিবেগ এতই প্রকট ছিল নৌকা আর মাঝির হিমশিমের অবস্থা।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় যেখানে মাঝি নিজেই ভয় পাচ্ছে সেখানে নিতান্তই আমরা ভয় পাওয়া স্বাভাবিক, তবে ঘুমের কারনে হয়তোবা অনেকে এই ভয়ংকর মূহুর্ত উপভোগ করতে পারেনি । বাতাসের এই গতিবেগকে উপেক্ষা করে ফিরে এলাম মহোরখানা বাজার ঘেঁষে লোকালয়ে। সেখানেই রাত্রি যাপন। ভোরের আলোয় দেখতে পেলাম ছোট ছোট নৌকা নিয়ে হাওরের মাছ ধরছে জেলে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। বোট আবার ছেড়ে দিল। যেন কোনো একদিকে রওনা হয়েছি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি, মাঝে মাঝে পানির ওপর ভাসমান গ্রাম যেন দ্বীপ। জানতে পারলাম উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয় এই নিকলী হাওরের সোয়াইজনী নদীতে। ভাটি বাংলার ঐতিহ্য লোক সংস্কৃতির অন্যতম এই উৎসব আদিকাল থেকে প্রতি বছর ১ ভাদ্র অনুষ্ঠিত হয়। 

ইনশাআল্লাহ.... এই ১ ভাদ্রের অপেক্ষায় ।