ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম এর রাজধানী গ্যাংটক। হিমালয় পর্বতশ্রেণির শিবালিক পর্বতে প্রায় ১৪০০মিটার উচ্চতায় এই গ্যাংটকের অবস্থান। সৌন্দর্যের জন্য একে ‌‘পূর্বের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়। সত্যজিৎ রায় রচিত উপন্যাস ‘গ্যাংটকে গন্ডগোল’ পড়ে জায়গাটির প্রতি আমার অন্যরকম এক আকর্ষণ জন্ম নেয়। তাছাড়াও কিছুটা হলেও ইউরোপের ছোঁয়া নেওয়ার জন্য সিক্কিম ভ্রমণ বৃথা যাবে না। 


অনেকদিনের প্লান যাচ্ছি সেই ডিসেম্বর কিন্তু কোন না কোন সমস্যা প্রতিবারই আটকে দেয়। শেষমেশ ১৪ই মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় প্রিয় চট্টগ্রাম থেকে রওনা সাদা পাহাড়ের দেশ গ্যাংটকে। পরের দিন ৮জনের টিম বাংলাবান্ধা বর্ডারের ইমিগ্রেশন শেষ করে শিলিগুড়ি পৌছে জিপ নিয়ে পৌছাই রংপু পারমিট অফিসে। মূলত যারা গ্যাংটক যাই প্রত্যেককে এখান থেকে অনুমতি এবং পাসপোর্ট সিল নিয়ে যেতে হবে। গ্যাংটক পৌছাই রাত এগারোটার দিকে। রুম আগে থেকে বুকিং ছিল বিধায় কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নাই। গ্যাংটকে রাত ৯ টা বাজতে বাজতেই প্রায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং তার আগেই সবকিছু শেষ করার চেষ্টা করবেন। কেউ যদি প্যাকেজে ঘোরার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই খাবার ও হোটেলের বিষয়ে জেনে নেবেন। কারণ অনেকসময় লাচুং-এ কাঠের তৈরি হোটেলে রাখে। বরফ রাজ্যে কাঠের হোটেলে থাকা অনেক কষ্টকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! আর এমজি মার্গ থেকে নর্থ সিকিমের গাড়ি যেখান থেকে ছাড়ে ওখানে যেতে কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া ১৫০ রুপি লাগে। তাদের বলে রাখবেন, তারা যেন ট্যাক্সি ভাড়া করে ওখানে নিয়ে যায়। তাহলে আর অতিরিক্ত ১৫০ রুপি গুনতে হবে না। আমাদের প্যাকেজে ছিল বুফে ২ বেলা লাঞ্চ, ১ বেলা ডিনার ও ব্রেকফাস্ট। ওইদিনের মতো কাজ শেষ করে হোটেল থেকে বিরিয়ানি খেয়ে হোটেলে এসে তাড়াতাড়ি ঘুম দিলাম। কারণ পরদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটেই নর্থ সিকিম যাত্রা শুরু করতে হবে।
পরের দিন রওনা লাচুং এর উদ্দেশ্যে।। গ্যাংটক থেকে লাচুং এর দূরত্ব প্রায় ১১০ কিমি, সম্পূর্ণ পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে যেতে। যাওয়ার সময় মনে হবে একবার উপরে উঠছি আরেকবার মনে হবে নিচে নামছি। যাওয়ার সময় তিস্তা নদী সামনে পড়ে, এতটা স্বচ্ছ নীল পানি আমি আগে কখনো দেখিনি। বড় বড় ২ টা অসাধারণ সুন্দর ঝরনাও সামনে পড়বে। দেখলেই বোঝা যায় যে বৃষ্টি হওয়াতে ঝরনাগুলো তাদের যৌবন ফিরে পেয়েছে।
৬ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে পৌছাই লাচুং। লাচুং দ্বিতীয় রাত কাঠায়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চারপাশের সৌন্দর্য এবং সাদা পাহাড় দেখে নিজেকে অন্য এক গ্রহে আবিষ্কার করলাম। উদ্দেশ্যে এখন ইয়ামতাং ভ্যালি। আমাদের সামনে সাদা বরফের পাহাড়। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে টুক করে নেমে গেলাম সবাই। স্তব্ধ হয়ে মুহূর্তের পর মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল প্রত্যেকে। এখানে সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ফ্রেশ।
লাচুং থেকে ইয়ামথাং ভ্যালিতে যাওয়ার সময় সমস্ত প্লাস্টিকের বোতল রেখে যেতে হবে, না হলে ধরা পড়লে ৫০০ রুপি জরিমানা! লাচুং থেকে ইয়ামথাং ভ্যালির দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। পর্যায়ক্রমে ইয়ামতাং ভ্যালি, কাটো হয়ে গ্যাংটক ফিরে আসি।
রাত কাটাই গ্যাংটক সিটিতে। ভোরে ওঠে রওনা দিই সংগো লেকের উদ্দেশ্যে। সংগু লেকে ভ্রমণ শেষে চলে আসি শিলিগুড়ি।
রাতে শিলিগুড়ি থেকে পরের দিন প্রিয় চট্টগ্রামে রওনা। কি দেখেছি কি খেয়েছি কিভাবে যাতায়াত করেছি সোসাল মিডিয়ায় অহরহ। তাই এত বিশদ লিখলাম না। তবে আমাদের চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২৫০০টাকার মত। খরচ আরো কম হতো কেননা আমরা প্যাকেজের ছেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়েছিল।
আরো ছবি পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার ফেসবুক অ্যালবামে




জেনে রাখা ভালো
সিকিম যাওয়ার আগে ১০ কপি করে পাসপোর্ট, ভিসা ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হবে। রাংপোতে আসা-যাওয়ার পথে সিল অ্যারাইভ ও ডিপারচার করিয়ে নিন। নয়তো পরবর্তী সময়ে ভিসা পেতে সমস্যা হবে। অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে জিপে যাতায়াতের সময় অবশ্যই বলে নেবেন, রাংপোতে কিছু সময় দাঁড়াতে হবে। যদি একসঙ্গে সিকিম ও দার্জিলিং ট্যুরের পরিকল্পনা থাকে তাহলে আগে দার্জিলিং ঘুরবেন। নর্থ সিকিমে বেড়ানোর আগে সাঙ্গু লেক ঘুরে আসুন। গোছানো ও পরিছন্ন সিকিমে প্রকাশ্যে ধূমপান ও মদ্যপান নিষেধ। এমন কাজে ধরা পড়লে ৫ হাজার রুপি জরিমানা গুনতে হবে। শিলিগুড়ি ও দার্জিলিংয়ে দালালের চক্কর থেকে সাবধান। রাস্তায় কোনও প্লাস্টিক বা অপচনশীল কিছু ফেললে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হবে।