প্রায় বছর খানিক হয়ে গেল তিন্দুর ছোয়া লেগেছে। এইবার সাড়া দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তাই গা ভাসিয়ে দিয়েছি শঙ্খ নদীর জলে জলে। তিন্দু নিয়ে বিস্তারিত কিছুই বলার থাকে না। কারণ এটা বর্ণনা দিয়ে সৌন্দর্য প্রকাশ করা যায় না। তিন্দু দেখা যাদের সৌভাগ্য হয়নি তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।
-৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় নতুন ব্রীজ থেকে যাত্রা শুরু চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। ওখান থেকে রওনা দেয় আলীকদম। রাত কাটে আলীকদমে। খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে ভাঙ্গে নতুন এক সূর্য উদয় উপভোগ করে। রওনা এখন মাতামহরী অতিক্রম করে আলি গুহার উদ্দেশ্যে। নৌকা ভ্রমণ করে আলী গূহা দেখে বাইকে করে রওনা দেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ার ডিম পাহাড়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চতম রাস্তা এই ডিম পাহাড় যেটি সংযুক্ত করেছে থানচি এবং আলীকদমকে। ওখান থেকে তিন্দুতে যেতে ঘন্টাখানিক হাটতে হয়। একেবারে খাড়া পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে তিন্দুতে নামতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগে আর এই সময়টুকু হল ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।ক্যাম্পিং করব বলে তাবু এবং যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলাম কাঁধে করে। তারপরও একটা ছোট্ট রিসোর্ট ভাড়া করে নিলাম পাড়ার হ্যাঁডম্যান থেকে। রিসোর্ট টা নিলে ও পুরো রাতটা কাটে শংকর পাশে ওই মাচাং ঘরে। রাতভর নদীতে মাছ ধরা আর পানিতে লাফালাফি ছিল সবচেয়ে মজার দিক। পুরো রাত কাটে গল্প গান কবিতা আর ভৌতিক কাহিনী শুনে। মাথার উপর লক্ষ কোটি তারা যেন আসমানকে আলোকসজ্জা করে রেখেছে। মাঝেমধ্যে মেঘ আসে দূরের উচু পাহাড় ডিঙিয়ে । তারপরও মাথার উপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকে লক্ষ কোটি তারা। এভাবেই কিভাবে যেন রাতটা কেটে যায়।
পরের দিন ভোরে মেঘ পাহাড়ের যুদ্ধ দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় রওনা দিই বড় পাথর দেখতে।
ছোট্ট ইঞ্জিনচালিত এই নৌকাতে যারা ভ্রমন করেছে তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় বাংলাদেশে সবচেয়ে সুন্দরতম ভ্রমণ কোনটি? তারা নিঃসন্দেহে উত্তর দিবে থানচি থেকে রেমাক্রি যাওয়ার পথে তিন্দু বড় পাথর পাড়ি দেওয়া টা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম ভ্রমণ। সুন্দরতম পাথর শঙ্খ নদীতে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। অতঃপর ঐ বোটেই রেমাক্রি জলপ্রপাতে গা ভাসিয়ে দিলাম। পর্যায়ক্রমে ওই নৌকায় থানচি এসে বান্দরবান চলে আসলাম। উপর আল্লার রহমতে প্রিয় চট্টগ্রামে ফিরি রাত এগারোটার দিকে।
0 Comments