দামতুয়া ঝর্ণা বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান জেলার দুর্গম জায়গায় যে কয়টি সুন্দর ঝর্ণা আছে তার মধ্যে আকার আকৃতি ও সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ঝর্ণার মধ্যে একটি। ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা দুর্গম হওয়ায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে বর্তমানে খুবই আকর্ষণীয় এই স্থান। দামতুয়া ঝর্ণাটি আরও বেশ কিছু নামে পরিচিত। তার মধ্যে তুক অ ঝর্ণা, লামোনই ও ডামতুয়া ঝর্ণা নাম উল্লেখযোগ্য। দামতুয়া যাওয়ার পথেই পাবেন ওয়াংপা ঝর্ণা, তুক অ ঝিরি ঝর্ণা, আরও বেশ কিছু সুন্দর ক্যাসকেড। এই ঝর্ণায় যাবার রাস্তা মোটেও সহজ নয়। ঝর্ণায় যাওয়া আসার জন্যে পাহাড়ী রাস্তায় প্রায় ১২-১৩ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। তাই যাঁরা পাহাড়ি পরিবেশে হাঁটতে পারেননা এবং শিশু ও বয়স্কদের সেখানে না যাওয়াই ভালো।

কিভাবে যাবেন:
ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে বাসে যেতে হবে আপনাকে চকরিয়ায়। সেখান থেকে জীপে করে ঘন্টাখানেক ভ্রমন করে যেতে হবে আলীকদমে।


আলীকদম থেকে দামতুয়া ঝর্ণা:
আলীকদমে এসে আলীকদমের পানবাজার থেকে আপনাকে বাইক ভাড়া করে যেতে হবে আলীকদম-থানচি রাস্তার ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদুপাড়াতে। এক বাইকে ২ জন করে বসা যাবে, জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ২৫০-৩০০ টাকা। ভাড়ার বিষয়ে আপনাকে দরদাম করে নিতে হবে। অথবা আপনারা একসাথে বেশি মানুষ থাকলে আলীকদম থেকে চান্দের গাড়ী/জীপ ভাড়া করে নিতে পারবেন। আলীকদম থেকে যাবার পথে ১০ কিলোমিটার পৌছানোর পর সেখানের আর্মি ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হবে। সেখানে সবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও ফোন নাম্বার দিয়ে নাম এন্ট্রি করে সামনে যাবার জন্যে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। আর মনে রাখতে হবে আপনাকে অবশ্যই সেইদিনই ট্রেকিং শেষ করে বিকেল ৫ টার আগে এই ১০ কিলো আর্মি ক্যাম্পে ফিরে এসে রিপোর্ট করতে হবে। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টে আদুপাড়া নামের একটা গ্রাম আছে সেখানে নেমে আপনাকে ট্রেকিং শুরু করতে হবে। আদুপাড়া থেকে ঘুরে ফিরে আসতে প্রায় ৬ ঘণ্টার মত লাগবে।
তবে ট্রেকিং শুরু আগে আপনার প্রয়োজনীয় কিছুর দরকার হলে সেখানের ছোট স্থানীয় দোকান কিনে নিতে পারেন। আর দুপুরে খাবারের জন্যে আগে থেকেই সাথে করে শুকনো খাবার নিয়ে নিতে হবে। ঝর্ণায় যাবার জন্যে আপনার গাইডের প্রয়োজন হবে। আদুপাড়া থেকে আপনি সারাদিনের জন্যে গাইড ঠিক করে নিতে পারবেন। আপনাকে ঘুরিয়ে দেখিয়ে নিয়ে আবার ফিরে আসার জন্যে গাইড ফি হিসবে নির্ধারিত ১,০০০ টাকা দিতে হবে।

দামতুয়া ঝর্না দেখে ফেরত আসার সময় একটি পাড়া পরবে, যার নাম মেম্বার পাড়া। এই পাড়া ফেলে হাতের ডানে একটি সরু রাস্তা পাহাড়ের নিচের দিকে নেমে গেছে আর এই রাস্তা ধরে গেলেই দেখা মিলবে ওয়াং-পা ঝর্ণার। কি কি দেখবেন তা গাইডের সাথে আগেই আলাপ করে নিবেন।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়:
বছরের যে কোন সময় দামতুয়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। তবে ঝর্ণায় যেহেতু পানি বেশী থাকে বর্ষাকালে এবং বর্ষার পরের সময়টুকুতে, তাই এই সময়েই যাওয়া ভালো। তবে অতি বৃষ্টি হলে যাবার পথ অনেক কঠিন হয়ে যায়। সেই বিষয়ও আপনার বিবেচনায় থাকতে হবে।